শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন
এস এন পলাশ।।কোনোভাবেই ‘আদু ভাইদের’ রাহুমুক্ত হচ্ছে না বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি ৮ বছরেও পারেনি পূর্ণাঙ্গ করতে। তবুও ওই ব্যার্থ কমিটির অনেক নেতা পরবর্তী কমিটিতেও স্থান পেতে চাচ্ছেন। যদিও ইতিমধ্যে ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীরা দলের অন্য সংগঠনের শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন। এরপরও ওই ব্যার্থ নেতারা ছাড়ছেন না ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ। ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের আভাস পেয়ে ওই নেতারা তাদের অনুসারি নব্যদের পদ পাইয়ে দিতে তোরজোর শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে পদ প্রত্যাশী ত্যাগী নেতাদের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।
ছাত্রদলে পদ প্রত্যাশী একাধিক মাঠ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলা ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ হাসান মামুন বর্তমানে মহানগর যুবদলের সভাপতি। যুগ্ম আহ্বায়ক এইচ.এম তসলিম উদ্দিন বর্তমানে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জু মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সস্পাদক হয়েছেন। এই তিন নেতা ছাত্রদলে থাকাকালে ব্যাপক দাপটের সাথে সংগঠনকে নিয়ন্ত্রন করেছেন। তাদের কর্মকান্ড নিয়ে রয়েছে বহু বিতর্ক। বয়স পার হওয়ায় ছাত্রদলের কমিটিতে পদ থাকা অবস্থাতেই তারা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে পদ পেলেও ছাত্রদলে তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে সম্ভাব্য কমিটি নিয়ে কূটকৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
দলীয় সূত্র জানায়, এরা সকলেই বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি অ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে বিভিন্ন সময় তারা সরোয়ারের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে এবং পদের অপব্যবহার করে নান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জানা গেছে, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হিসেবে বিভিন্ন উপজেলার কমিটি গঠনকে ঘিরে বাণিজ্যে মেতে ওঠে মাসুদ হাসান মামুন। গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেওয়ার নামে দলীয় নেতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে দেবো-দিচ্ছি করে আর কমিটিই করে দেয়নি। ওই সব নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার কারণে এক সময় তার নাম হয়ে ওঠে ‘বিকাশ মামুন’। টাকা দেওয়া পদ প্রত্যাশী নেতাদের তোপ থেকে রক্ষায় মামুন তার অনুসারী নেতাদের জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান দিতে লবিং চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। তার অনুসারীরা পদ পেলে যাদের কাছ থেকে মামুন টাকা নিয়েছে সেই উপজেলার নেতাদের আগামির কমিটিতে পদ দিতে পারবে বলে মনে করছে সে। অভিযোগ আছে, মামুন যাদের পক্ষে দৌড়ঝাপ করছে তারা কেউই গুরুত্বপূর্ণ পদের যোগ্য নয়। এরা মামুনের ডাকে মাঝে-মধ্যে দলীয় কর্মসূচিতে আসে, আবার আসেও না।
জেলা ছাত্রদল যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুবদল সাধারণ সম্পাদক এইচ.এম তসলিম উদ্দিনকে নিয়ে রয়েছে ভিন্ন বিতর্ক। তার পরিবারের মধ্যে আছে বহুমুখী রাজনীতিক। সে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও তারই বড় ভাই জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন এবার। আরেক ভাই আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এবং অপরজন জামায়াত ইসলামীতে। অভিযোগ আছে, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দল থেকে সুবিধা নিতেই এই কৌশলী পন্থায় তসলিমের পরিবার। সেও কিছু যুবককে ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
মহানগর ছাত্রদল যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দল সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মঞ্জু বহু আগেই ছাত্র জীবন শেষ করলেও এবারের ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি পদ চাচ্ছিলেন। বয়সের কারণে তালিকাচ্যুত হয়েও ছাত্রদলে প্রভাব ধরে রাখতে মরিয়া সে। ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিএনপির রাজনীতি থেকে বিদায়ের কথা জানালেও দল বা সংগঠনের কাছ থেকে অব্যাহতি নেয়নি। এরপর থেকে দলীয় কর্মসূচি এড়িয়ে চললেও স্বেচ্ছাসেবক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে পুনরায় দলে কর্মকান্ডে দেখা যায় তাকে। চতুর মঞ্জু ছাত্রদলে গুরুত্বপূর্ণ পদে কখনই আসীন হতে না পারলেও সব সময়ই একটি নিজস্ব বলয় নিয়ে চলতেন। যে কারণে তার গ্রুপের দ্বারা বিভিন্ন সময় সিনিয়র নেতারাও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।
এরা সকলেই ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে দলের ভিন্ন সংগঠনের পদে অবস্থান করলেও নানান কারণে ছাত্রদলের কমিটিকে হাতের মুঠোয় রাখতে নিজেদের অযোগ্য অনুসারীদের পদ পাইয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের এ চেষ্টার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পদ প্রত্যাশী ত্যাগী নেতারা ক্ষুব্ধ এবং শংকিত আগামির বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি নিয়ে। তারা ‘আদু ভাই’র রাহুমুক্ত মুক্ত ছাত্রদল কমিটি দিতে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং নীতি-নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
Leave a Reply